হেরিটেজ রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কে কিছু কথা

27th July 2020 12:48 pm শিক্ষা
হেরিটেজ রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কে কিছু কথা


        লেখক : ডঃ সর্বজিৎ যশ

( ইতিহাসবিদ ও হেরিটেজ বিশারদ , বর্ধমান )  

হেরিটেজ বলতে কি বোঝায় তার স্পষ্ট ধারণা বেশিরভাগ মানুষেরই নেই ।  সংকীর্ণ পণ্ডিত মহলে এর ধারণা সীমিত ।এখন ' হেরিটেজ হেরিটেজ 'করে চিৎকার করার লোক কিন্তু বেড়ে গেছে , সাধারণ মানুষের ধরনা হলো - ' হেরিটেজ হলো একটা জগদ্দল কিছু , যা কোনো ভাবে নরানো চড়ানো যাবে না , তার কৃষ্ণ গহ্বরে একবার ঢুকে পড়লে আর বেরোনো সম্ভব নয় "। পুরনো হেরিটেজ বাড়ির মালিকরা ভয়ে ভয়ে থাকেন ,একবার হেরিটেজ সাইট হয়ে গেলে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে , স্বাভাবিক ভাবেই হেরিটেজ বিষয় থেকে সাধারণ মানুষ ভয়ে দূরে থাকতে চান । তারা বুঝতেই পারেন না , পুকুর, পার্ক বা ব্যাক্তিগত পত্র কিভাবে হেরিটেজ হয় । ফলে তারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি, মন্দির ,ব্যাক্তিগত পত্র,ভবন  হেরিটেজ হয়ে যাওয়া আটকে দেওয়ার চেষ্টায় থাকেন ।
      এখন সরকারি ভাবে " পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন" তৈরি  করা হয়েছে । বিভিন্ন জেলায় তৈরি করা হয়েছে হেরিটেজ কমিটি । আমাদের বর্ধমান জেলাতে ২০১১সালে তৈরি হয় ' বর্ধমান হেরিটেজ এসোসিয়েশন', আমাকে সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয় ,সেই থেকে বিভিন্ন হেরিটেজ কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে দেখেছি ,মানুষকে হেরিটেজ সম্পর্কে অবহিত করা আমাদের একটি প্রধান কাজ । 
    তাছাড়াও যে কাজ গুলি করতে হবে , সেগুলি হলো - ১) প্রথমে হেরিটেজ সম্পর্কে জ্ঞান আছে এমন মানুষদের নিয়ে ,প্রতিটি জেলায় ,যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত প্রতিটা শহরে আগে একটি করে হেরিটেজ কমিটি গঠন করা, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে বিদ্বজ্জন কে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা উচিৎ, তারা একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষকে হেরিটেজ সম্পর্কে অবহিত করার  কাজ করবেন ,আবার কোনও হেরিটেজ সাইট ধ্বংসের চেষ্টা হলে প্রশাসনকে অবহিত করার কাজও করবেন। ২) প্রতিটি জেলায়,এবং অবশ্যই পৌরসভা অঞ্চলের একটি করে হেরিটেজ ম্যানুয়াল তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে আর হেরিটেজ ধ্বংস না হয়, এই কাজ কলকাতা ছাড়া এখনও কোথাও হয়নি। ৩) হেরিটেজ সাইট ঠিক কি ভাবে তার মালিকরা বিভিন্ন রকম কর ছার পাবেন - তার ব্যবস্থা করতে হবে ।হেরিটেজ সাইট রক্ষা  করে  কিভাবে বাকি জমি ,বা বাড়ি বা অন্য কোথাও কিছুর অংশ বিশেষ বানিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, তার পরামর্শ এই হেরিটেজ কমিটি দেবে । ৪) হেরিটেজ বস্তুর মালিক হেরিটেজ রক্ষার পুরস্কার হিসেবে কিভাবে সহজে ব্যাংক ঋণ ,বা অন্য সরকারি সাহায্য পেতে পারেন , তাও দেখতে হবে । ৫)হেরিটেজ সাইট ঠিক মতো রক্ষা না করলে ,বা সহযোগিতা না করলে ,সেই হেরিটেজ সাইট এর মালিকের সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করা ও জরিমানা করার চাপও থাকতে হবে ।
    আমার মনে হয় এই ভাবে হেরিটেজ সাইট রক্ষার একটা চেষ্টা করা দরকার, অনেক কিছু আমরা হারিয়ে ফেলেছি ।  যা এখনও অবশিষ্ট রয়েছে  চেষ্টা করলে হয়তো তার কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব ।
 





Others News

বিদ‍্যাসাগরের জন্মদিনে বিশেষ অনুষ্ঠান বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের

বিদ‍্যাসাগরের জন্মদিনে বিশেষ অনুষ্ঠান বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের


বিশেষ সংবাদদাতা ( বর্ধমান ) :  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মদিনে উপলক্ষে বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে  বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ রোডে 'সোনার তরী' অনুষ্ঠান মঞ্চে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিদ্যাসাগরের ছবিতে মালা প্রদান করে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। উদ্বোধনী সঙ্গীত পেশ করেন স্বাগতা বন্দোপাধ্যায় । স্বাগত ভাষণ দেন বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক ড. সর্বজিৎ যশ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামসুন্দর কলেজের অধ্যক্ষ ড. গৌরী শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়।ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ড. রঙ্গন কান্তি জানা, ড. অর্ধেন্দু সরকার, ড. মোহন পাল, ড. ঝর্না বর্মন, ড. জহির আব্বাস, ড. মেধাতিথি বর্মন, রক্ষকর কুন্ডু প্রমুখ। এছাড়াও কবিতা পাঠ করেন দিপেন্দ্র নাথ শীল, সেখ জাহাঙ্গীর প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে ড. ঝর্না বর্মন লিখিত 'প্রাগাধুনিক সাহিত্য' বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ড. গৌরী শঙ্কর বন্দোপাধ্যায় এবং বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের নিউজ বুলেটিন 'ভূর্জপত্র' প্রকাশ করেন সাংবাদিক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী এবং সভাপতিত্ব করেন প্রবীর চট্টোপাধ্যায়।সমস্ত রকম সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুযায়ী অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়।